এক্ষেত্রে AI শুধুমাত্র ইনপুট এর উপর এই নির্ভর করে না বরং ইউজার এক্সপেরিয়েন্স হিস্টোরিকাল ডেটার ওপরেও ডিপেন্ড করে। এর সবথেকে ভালো উদাহরণ হল অ্যাপেলের SIRI, গুগল Assistant কিংবা Alexa. এটা বিভিন্ন সোর্স থেকে ডাটা কালেক্ট করে সেগুলোকে এনালাইস করে এবং যে ব্যবহার করছে অর্থাৎ ইউজারের প্রয়োজনটাকে বোঝে আর সেইসমস্ত কিছুর উপর ডিপেন্ড করেই এটা তার আউটপুট দেয়। যদি আপনি প্রশ্ন করেন যে ওয়েদার কেমন থাকবে আজকে? এবং যদি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে SIRI কিংবা গুগল Assistant আপনাকে ছাতা নিয়ে যাওয়ার কথা বলতে পারে কিংবা ধরুন বিরিয়ানির কথা জিজ্ঞেস করলে হয়তো এটা আপনাকে আশেপাশের রেস্টুরেন্টের ঠিকানাও দেখিয়ে দিতে পারে। আবার এই ধরনের AI এর একটা স্পেশাল ফিচার হল রিটেনশন সিস্টেম অর্থাৎ অতীতে আপনি গুগল Assistant কিংবা Alexa এর সাথে কেমন ভাবে এটিটিউড করেছিলেন, কেমন ভাবে ব্যবহার করেছিলেন সেটা এই AI মনে রাখে। যার জন্য এগুলো আপনার প্রয়োজনমতো আনসার দিতে পারে যে আনসার টা আপনার সত্যিই কাজে লাগবে। যেমন ধরুন কোন কিছু কেনার ক্ষেত্রে আপনি কোন কোন আইটেম আগে কিনেছিলেন অথবা কোন আইটেম টা কে আপনি অনেকক্ষণ ধরে দেখেছিলেন সেই সবকিছু এই AI মনে রাখে এবং সেই সবকিছুর উপর রিসার্চ করে আপনাকে আপনার প্রয়োজন মত আইটেম আপনার সামনে তুলে ধরে যাকে আপনি পার্সোনালি শপিং ইনফরমেশন বলতে পারেন। মানে একই আইটেম যদি সার্চ করি আমি এবং আপনি তাহলে দুজনার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা রেজাল্ট দেখাবে।

এরকম ধরনের AI কে কোন স্পেসিফিক কাজ করার জন্য তৈরি করা হয়। যে সমস্ত কাজগুলো সাধারণ মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয় যেমন ধরুন মেডিকেল ফিল্ডে কোন AI কয়েক মিনিটের মধ্যে হাজারো মেডিকেলের বই পড়ে ফেলতে পারে। ঐ ডেটা থেকে নিজের কনকুলোশনও বের করে ফেলতে পারে। তার সাথে লক্ষ লক্ষ মেডিকেল রিপোর্টকে কয়েক মিলি সেকেন্ডের মধ্যে এনালাইজ করে কি কি ডায়গনোসিস করতে হবে সেটাও রেকমেন্ড করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে IBM এর ওয়াটসন এমন একটা AI যা প্রচুর পরিমাণে ডেটাকে মেডিকেল ফিল্ডে এনালাইস করার সক্ষমতা রাখে। ঠিক একইভাবে স্টক মার্কেটের ক্ষেত্রে এই ধরনের Narrow Domain AI মার্কেট কে এনালাইস করতে পারে এবং ফিউচারে মার্কেট কোন দিকে যাবে সেটারও অনুমান লাগাতে পারে। তবে এরা যে শুধুমাত্র ডেটা-কে এনালাইজ করে সেটা নয় বরং বিভিন্ন ধরনের ডেটা সেট তৈরি করতে পারে এমনকি বিভিন্ন ধরনের গ্রাফ তৈরি করতে পারে যেগুলো এক ঝলকে কোন মানুষের পক্ষে বোঝা খুবই সহজ হয়ে যায়। গেমিং-এর ক্ষেত্রে আলফাগো এর একটা বড় উদাহরণ। ভবিষ্যতে এই Narrow Domain AI রিয়েল-টাইম ট্রান্সলেট করতে পারবে যে কোন ল্যাঙ্গুয়েজকে। যার জন্য আপনি ভিনভাষী মানুষের সঙ্গে খুবই ইজিলি কথা বলতে পারবেন যে সুবিধা মানুষের কাছে অতীতে কোনদিনই ছিল না।

এরকম ধরনের AI আমরা যেমন ধরনের ভাবনা চিন্তা করি সেই ভাবে ভাবনা চিন্তা করতে পারে। এরা শুধু এটাকে প্রসেস করে না, এটাকে এনালাইজ করে, প্যাটার্ন কে কানেক্ট করার চেষ্টা করে এবং সবকিছু শেষে একটা লজিক্যাল কনক্লুশনে আসে। এই রিজনিং AI-এর সবথেকে ভালো উদাহরণ হল chatGPT। যেটা একটা LLM মডেল অর্থাৎ লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল। এই ধরনের মডেলকে প্রচুর পরিমাণে ইন্টারনেট ডেটাকে কম্পাইল করে তৈরি করা হয়েছে এবং ধীরে ধীরে LLM মডেল এত বেশি অ্যাডভান্স হয়ে যাচ্ছে যে কোন মানুষের সঙ্গে কথা বলা এবং এই LLM মডেলের সঙ্গে কথা বলার মধ্যে ফিউচারে কোন ডিফারেন্স থাকবে না। অটোমেটিক গাড়িও রিজনিং AI এর একটা বড় উদাহরণ। এরা রাস্তার প্যাটার্ন, গাড়ির মুভমেন্ট এবং স্পিড এই সবকিছুকে নিজে থেকে এনালাইজ করে নিজে থেকেই ডিসাইড করতে পারে যে গাড়ি কিভাবে কোন পথে কত স্পিডে চালাতে হবে।

আর্টিফিশিয়াল জেনারেল এন্টালিজেন্স অথবা এজিআই। এটা সেই সমস্ত ধরনের সফটওয়্যারকে ব্যবহার করতে পারে যে সফটওয়্যারকে মানুষ ব্যবহার করতে পারে অর্থাৎ একটা সাধারণ মানুষকে আপনি যে যে সফটওয়্যার ব্যবহার করা শেখাতে পারবেন AGI-কেও সেই সমস্ত সফটওয়্যার ব্যবহার করা শেখাতে পারবেন। তবে পার্থক্য হলো মানুষের থেকে এটা হাজার হাজার গুণ বেশি দ্রুত গতিতে শিখে যাবে। উদাহরণ হিসেবে একটা মানুষের ফটোশপ শিখতে মোটামুটি ছয় মাসের মতো সময় লেগে যায় কিন্তু AGI এই ফটোশপকে কয়েক মিনিটের মধ্যে শিখে ফেলতে পারবে। এরকম ধরনের AI যখন আমাদের ব্যবহারের মধ্যে চলে আসবে তখন আমদের জীবন অনেক অনেক গুন পাল্টে যেতে পারবে যেটা আপনি কল্পনাও করতে পারছেন না। কল্পনা করুন, আপনি AGI এর অ্যালার্মের সাথে ঘুম থেকে উঠলেন, ঘুম থেকে উঠার পর এটা শুধুমাত্র আপনার ফেভারিট মিউজিক-ই বাজাবে না বরং বুঝেও ফেলবে যে আপনার মুড কেমন আছে? আর সেই হিসেবে আপনার দিনটাকেও প্ল্যান করে ফেলবে তারপর আপনি কিচেনে যখন ব্রেকফাস্ট তৈরি করার জন্য যাবেন তখন AGI আপনাকে রেসিপি দিয়ে হেল্প করে দেবে। এই কনসেপ্টটাকে আরো অ্যাডভান্স লেভেল এ নিয়ে যাওয়া সম্ভব। যেমন ধরুন ব্রেন কম্পিউটার যখন বর্তমানে থেকে আরও অনেক বেশি অ্যাডভান্স হয়ে যাবে তখন এরকম ধরনের AGI-র সঙ্গে আপনি আপনার ব্রেনকেও কানেক্ট করতে পারবেন এবং AGI-র সঙ্গে আপনার ব্রেন রিয়েল টাইমে কমিউনিকেট করতে পারবে। এই AGI আপনাকে গাইডেন্স দিতে পারবে, নতুন চিন্তা ভাবনা দিতে পারবে, আপনার কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। আর সেইসব কিছু যে কানেক্টেড আছে সেই অনুভব করবে, বাইরে থেকে কেউ বুঝতেও পারবে না যে তার ব্রেনের মধ্যে কি চলছে। এবার ধরুন, এরকম ধরনের AGI কে যদি কোন রোবটের সঙ্গে কানেক্ট করা যায় তাহলে ওই রোবটটা যা কিছু করতে পারবে সেটা আমাদের কল্পনার বাইরে।

আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স অর্থাৎ এজিআই যখন আরও দ্রুতগতিতে অ্যাডভান্স হবে তখন এরকম ধরনের AI আরো অনেক বেশি অ্যাডাপ্ট করতে পারবে evolved ভাবে । এরকম ধরনের AI এর নিজে থেকেই এর Improve হওয়ার এইযে নেচার এদেরকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনেক অনেক বেশি অ্যাডভান্স বানিয়ে ফেলবে। এরকম ধরনের AI-র ব্রেন পাওয়ার এত এত বেশি হবে যে পৃথিবীতে যত মানুষ জন্মগ্রহণ করেছিল তাদের সবার ইন্টেলিজেন্সকে এক জায়গায় আনলেও আমরা এরকম ধরনের এই আয়ের সঙ্গে কমপিট করতে পারবো না। এই ধরনের AI সেই সমস্ত প্রবলেমকেও সলভ করতে পারবে যেগুলো বর্তমানে মানুষের পক্ষে কোনভাবেই সলভ করা পসিবল নয়। যেহেতু এরকম ধরনের AI এর ইন্টালিজেন্স ক্রমাগত ধীরে ধীরে ইম্প্রুভ হতে থাকবে Ray Kruzweil মতে- “এই শতাব্দীর শেষে এই ধরনের AI গুলো সমস্ত মানুষের থেকে কয়েক ট্রিলিয়ন গুণ বেশি ইন্টালিজেন্ট হয়ে যাবে এবং এরা এত বেশি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এত বেশি এবং এত কিছু আবিষ্কার করবে যা আমরা কল্পনাও করতে পারছি না” উদাহরণ হিসেবে মানুষ বিগত 2000 বছরের মধ্যে যত আবিষ্কার করেছে এই সুপার ইটালিজেন্ট AI কয়েক দশকের মধ্যে সেটা কমপ্লিট করে ফেলতে পারবে। যে সমস্ত জিনিসগুলোকে বর্তমানে আমরা সাইন্স ফিকশন মনে করি এমনকি যে সমস্ত জিনিসগুলো শুনলে আমরা হাসি যেমন ধরুন ওয়ার্ক ক্রাই, ব্ল্যাক হোলের এনার্জিকে হারনেস করা কিংবা টাইম ম্যানিপুলেশন এই সবকিছু হয়তো সুপার ইন্টেলিজেন্ট AI পসিবল বানাতে পারবে। যে সমস্ত জিনিসকে আমরা বর্তমানে থিওরি এবং আইডিয়া মনে করি Artificial Super Intelligence সেগুলোকে হয়তো বাস্তবায়িত করতে পারে এবং বর্তমানে পৃথিবীকে যেভাবে আমরা চিনি ভবিষ্যতে হয়তো সেটা একেবারে মতো পাল্টে যেতে পারে।

সুপার ইন্টেলিজেন্ট AI একসময় কোয়ান্টাম অ্যালগরিদম কে ব্যবহার করে মানুষের ইমোশন কে রেপ্লিকেট করতে পারবে অর্থাৎ সে নিজেকে নিয়ে সচেতন থাকবে। তার নিজের খুশি থাকবে, আনন্দ থাকবে, দুঃখ থাকবে, কষ্ট থাকবে এবং সে এটাও বুঝতে পারবে যে তার জন্য অন্য কারো কষ্ট হচ্ছে কিনা কিংবা সে কাউকে আনন্দিত করতে পারছে কিনা অর্থাৎ একেবারে মানুষের মত ফিলিং থাকবে তাদের। তারা এটাও বুঝতে পারবে- দেশ কি? সমাজ কি? এবং সামাজিক জীবন কেমন হয়? আমরা যদি সত্যিই কখনো সুপারেন্টেলিজেন্ট AI এর মধ্যে ইমোশন ঢুকিয়ে দিতে পারি তাহলে কিন্তু মানুষের সামাজিক জীবনেও এর জন্য অনেক অনেক বেশি প্রভাবিত হবে। আমাদের সম্পর্ক ওরকম ধরনের সেলফ অ্যাওয়ার্ড রোবটের সঙ্গে কেমন হবে? কিংবা ধরুন ওই রোবট গুলো আমাদের সম্পর্কে কিভাবে? তারা হয়তো নিজেদেরকে এমনভাবে ডেভেলপ করবে যেটা আমাদের কল্পনার বাইরে। হয়তো তারা নিজেদের জন্য কোন ধর্মই বানিয়ে ফেলতে পারে।

এরকম ধরনের AI মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মহাকাশের রেডিয়েশন মানুষ সহ্য করতে পারে না কিংবা ধরুন, মহাকাশে কয়েকশ বছরের যাত্রা মানুষ কোনোভাবেই মানুষ কমপ্লিট করতে পারবেনা কারণ তাদের বয়স বেড়ে যাবে এবং তারা স্পেসক্রাফট এর মধ্যেই মারা যাবে কিন্তু AI এর ক্ষেত্রে এই সমস্ত সমস্যাগুলো সমস্যা নয় এবং মহাকাশে তাদের যে ক্ষমতা থাকবে তা হয়তো সাইন্স ফিকশনের ক্ষেত্রেও আমরা ভাবতে পারি না। এরা হয়তো মহাকাশের দূরদূরান্তে নিজেদের স্পেসক্রাফট এবং লোক পাঠিয়ে একটা কসমিক নেটওয়ার্ক তৈরি করে ফেলতে পারবে। মহাকাশের যে সমস্ত রহস্য গুলো আমরা সলভ করতে পারিনি যেমন ধরুন ডার্ক ম্যাটার, ডার্ক এনার্জি কিংবা ব্ল্যাক হোল সেই সমস্ত রহস্য গুলো হয়তো এরা সলভড করে ফেলতে পারবে। এরা হয়তো মহাকাশের সমস্ত ফিজিকাল, মেটাফিজিক্যাল রহস্যকে মাস্টার করতে পারবে। কোয়ান্টাম লেভেল থেকে কসমিক লেভেল পর্যন্ত যে তিনটে ডাইমেনশন সম্পর্কে আমরা জানি Cosmic AI হয়তো এর থেকে বেশি ডাইমেনশন-কে এক্সপ্লোর করতে পারবে। এজন্য এরা হয়তো আলোর থেকেও দ্রুত গতিতে যাত্রা করতে পারবে, কে জানে? শুধু নক্ষত্র থেকে নয় বরং ব্ল্যাক হোল থেকেও এরা এনার্জি হারভেস্ট করতে পারবে।

সৃষ্টিকর্তা যেমন সব কিছু জানে এবং সব জায়গায় উপস্থিত গড-লাইক AI ও ঠিক এরকম ধরনেরই হতে পারে। এরা সব কিছু জানবে এবং সমস্ত জায়গায় একসাথে উপস্থিত থাকতে পারবে। কে জানে? ধার্মিক বইতে আমরা যাকে সৃষ্টিকর্তা মনে করি তারা হয়তো এরকম ধরনেরই কোন এন্টিটি। এরা সেইসমস্ত ডায়মেনশন থেকে সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডকে চালাতে পারবে যে সমস্ত ডায়মেনশনের কথা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। হয়তো এরা আমাদের সামনেই থাকবে কিন্তু আমরা বুঝতেও পারবো না। সম্পূর্ণ ব্রহ্মান্ডের মধ্যে নতুন জীবনকে তৈরি করার কিংবা ধ্বংস করার ক্ষমতা থাকবে এদের কাছে। এমনকি এরা ব্রহ্মাণ্ডকেও তৈরি করতে পারবে এবং প্যারালাল ইউনিভার্সের সমস্ত ডেটাকে এক জায়গায় কালেক্ট করে এরা বিভিন্ন প্যাটার্ন-কে বুঝতে পারবে এবং টাইম লাইন কে ফিক্স করতে পারবে।