পদার্থের বিভিন্ন অবস্থা
পদার্থ: যার ভর আছে, আয়তন আছে, স্থান দখল করে এবং বলপ্রয়োগে বাঁধা প্রদান করে, তাদেরকে পদার্থ বলে।
পদার্থ দুই প্রকার:
- মৌলিক পদার্থ (যেমন: হাইড্রোজেন)
- যৌগিক পদার্থ (যেমন: H₂O - পানি)
১. মৌলিক পদার্থ
যেসব পদার্থকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করলে অন্য কোনো পদার্থ পাওয়া যায় না, তাদেরকে মৌলিক পদার্থ বলে।
উদাহরণ: অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, লোহা, রুপা ইত্যাদি।
পানির (H₂O) একটি অণুকে ভাঙলে হাইড্রোজেনের দুটি পরমাণু ও অক্সিজেনের একটি পরমাণু পাওয়া যায়, তাই এটি মৌলিক পদার্থ নয়।
এখন পর্যন্ত ১১৮টি মৌল চিহ্নিত হয়েছে, যার মধ্যে ৯৮টি প্রকৃতিতে পাওয়া যায় এবং বাকি ২০টি কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা হয়।
মৌলিক পদার্থ চার ধরনের:
- ধাতু – তাপ ও বিদ্যুৎ সুপরিবাহী।
- উদাহরণ: কপার, অ্যালুমিনিয়াম, সিলভার, লোহা
- অধাতু – তাপ ও বিদ্যুৎ অপরিবাহী।
- উদাহরণ: ফ্লোরিন, সালফার, অক্সিজেন
- উপধাতু – কখনো ধাতুর মতো, কখনো অধাতুর মতো আচরণ করে।
- উদাহরণ: বোরন, সিলিকন, আর্সেনিক
- নিষ্ক্রিয় মৌল – রাসায়নিক বিক্রিয়ায় নিষ্ক্রিয়। মোট নিষ্ক্রিয় মৌলের সংখ্যা ৭টি।
- উদাহরণ: হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন, ক্রিপটন, জেনন, রেডন, ওগানেসন
২. যৌগিক পদার্থ
যে পদার্থকে বিশ্লেষণ করলে দুই বা তার বেশি ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়, তাকে যৌগিক পদার্থ বলে।
- উদাহরণ: H₂O (পানি), NaCl (লবণ)
উদ্বায়ী পদার্থ
যে সকল পদার্থ তাপ দিলে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয়, তাদেরকে উদ্বায়ী পদার্থ বলে।
- উদাহরণ: কপূর, ন্যাপথলিন, আইয়োডিন, নিশাদল
গলনাঙ্ক (Melting Point)
কোনো পদার্থকে কঠিন থেকে তরল করতে যে তাপমাত্রার প্রয়োজন, তাকে গলনাঙ্ক বলে।
- উদাহরণ: বরফের গলনাঙ্ক ০° সেলসিয়াস
স্ফুটনাঙ্ক (Boiling Point)
যে তাপমাত্রায় কোনো তরল ফুটতে থাকে, তাকে স্ফুটনাঙ্ক বলে।
- উদাহরণ: পানির স্ফুটনাঙ্ক ১০০° সেলসিয়াস
পদার্থের পরিবর্তন
পদার্থের পরিবর্তন দুই ধরনের:
- ভৌত পরিবর্তন
- রাসায়নিক পরিবর্তন
ভৌত পরিবর্তন
যে পরিবর্তনের ফলে শুধু পদার্থের বাহ্যিক আকার পরিবর্তন হয় কিন্তু কোনো নতুন পদার্থ তৈরি হয় না।
- উদাহরণ:
- পানি → বরফ → বাষ্প
- লোহাকে চুম্বকে পরিণত করা
- চিনিকে পানিতে দ্রবীভূত করা
রাসায়নিক পরিবর্তন
যে পরিবর্তনের ফলে এক বা একাধিক নতুন পদার্থ সৃষ্টি হয়।
- উদাহরণ:
- লোহায় মরিচা পড়া
- হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন মিশে পানি তৈরি হওয়া
- দিয়াশলাই জ্বালানো
সবচেয়ে হালকা মৌল: হাইড্রোজেন (H)
সবচেয়ে ভারী মৌল: ইউরেনিয়াম (U)
সবচেয়ে ভারী মৌলিক গ্যাস: রেডন (Rn)
পদার্থের অবস্থা তিন প্রকার।
- কঠিন (যেমন: বরফ)
- তরল (যেমন: পানি)
- বায়বীয় (যেমন: জলীয় বাষ্প)
এছাড়া পদার্থের আরেকটি বিশেষ অবস্থা হলো প্লাজমা অবস্থা যা পদার্থের চতুর্থ অবস্থা হিসেবে ধরা হয়। উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপে গ্যাসীয় পদার্থ আয়নিত অবস্থায় থাকে। একেই পদার্থের প্লাজমা অবস্থা বলে।
উদাহরণ: সূর্যের অভ্যন্তরীণ অবস্থা, বজ্রপাতের বৈদ্যুতিক ঝলক
কঠিন পদার্থের বৈশিষ্ট্য
- নির্দিষ্ট আকার ও ওজন আছে
- স্থান দখল করে
- তাপ দিলে প্রসারিত হয়
- বল প্রয়োগ করলে বাধা সৃষ্টি করে
তরল পদার্থের বৈশিষ্ট্য
- নির্দিষ্ট আয়তন আছে, কিন্তু আকার নেই
- যে পাত্রে রাখা হয়, সেটির আকার ধারণ করে
- নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ে
বায়বীয় পদার্থের বৈশিষ্ট্য
- নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন নেই
- স্থান দখল করে
- ঠান্ডা করলে তরলে পরিণত হয়
ধাতুর বৈশিষ্ট্য
- ধাতু চকচক করে।
- বিদ্যুৎ পরিবহন করে।
- তাপ পরিবহন করে।
- আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ করে।
- নমনীয় ও প্রসারণযোগ্য।
- সহজেই তার বা পাত তৈরি করা যায়।
- অধিকাংশ ধাতু কঠিন।
- উচ্চ গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক থাকে।
- অধিকাংশ ধাতু দৃঢ় প্রকৃতির।
- তীক্ষ্ণ আঘাতে ভঙ্গুর হয় না।
- উচ্চ ঘনত্বের কারণে বেশিরভাগ ধাতু ভারী।
অধাতুর বৈশিষ্ট্য
- অধাতু চকচক করে না।
- বিদ্যুৎ পরিবহন করে না।
- তাপ পরিবহন করে না।
- আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ করে না।
- ভঙ্গুর প্রকৃতির, সহজে ভেঙ্গে যায়।
- গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক সাধারণত কম।
- অধিকাংশ অধাতু গ্যাস বা কঠিন, ব্রোমিন তরল।
- ঘনত্ব কম, বেশিরভাগই হালকা।
- নমনীয় বা প্রসারণযোগ্য নয়।
- কিছু অধাতু রাসায়নিকভাবে খুব সক্রিয়।
- সাধারণত চৌম্বকীয় ধর্ম নেই।