📈 মূল্যস্ফীতি vs মুদ্রাস্ফীতি

📈 মূল্যস্ফীতি বা মুদ্রাস্ফীতি বা Inflation

💡 মূল্যস্ফীতি:

মূল্যস্ফীতি তখন হয় যখন চাহিদা বেশি থাকে কিন্তু যোগান কম থাকে, যার ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এটি অনেক সময় বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণেও হতে পারে।

💸 মুদ্রাস্ফীতি:

মুদ্রাস্ফীতি ঘটে যখন সরকার অতিরিক্ত টাকা ছাপে, যার ফলে বাজারে টাকার সরবরাহ বেড়ে যায় এবং পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। তবে, এক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের কোনো ভূমিকা থাকে না।

📊 একটি উদাহরণ:

কোন দেশে সর্বোপরি যতটুকু সম্পদ আছে তার মূল্য ঐ দেশের বর্তমানের মোট মুদ্রামানের (টাকা) সমান।
মনে করি, বাংলাদেশে সর্বোমোট ১৫ টাকা আছে এবং এই দেশে সম্পদ বলতে সবমিলিয়ে ৫ টি আপেল আছে। আর কিছু নেই।
যেহেতু দেশের মোট সম্পদের মূল্য মুদ্রামানের সমান, সেহেতু এই ৫ টি আপেলের মূল্য ১৫ টাকা।
তাহলে প্রতিটি আপেলের মূল্য ৩ টাকা।

এখন যদি আরো ৫ টাকা ছাপানো হয়, তাহলে মোট মুদ্রামান হয়ে যাবে ১৫ + ৫ = ২০ টাকা।
খেয়াল করবেন, আপেল কিন্তু বাড়েনি।
তারমানে নতুন করে ৫ টাকা ছাপানোর পর ৫ টি আপেলের মূল্য হয়ে গেল ২০ টাকা।
অর্থাৎ এখন প্রিতিটি আপেলের মূল্য ৪ টাকা।

এই সম্পদ না বাড়িয়ে অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর ফলে আপেলের মূল্য ৩ টাকা থেকে ৪ টাকা হয়ে গেল, এটাই সহজ ভাষায় “মূল্যস্ফীতি”।

🧾 একই পণ্য আগের চেয়ে বেশি দামে ক্রয় করা মানেই মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে।

🔁 অর্থাৎ, কোন দেশের সম্পদের পরিমাণ না বাড়িয়ে টাকা ছাপালে মুদ্রাস্ফীতি হবে।

🏦 এবার আসি খালাপী ঋণের প্রসঙ্গে

সহজভাষায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করলে সেই ঋণ কে খেলাপী ঋণ বলে।

আবার সেই ১৫ টাকা ও ৫ টা আপেলে ফিরে আসা যাক।
মনে করুন, এই ১৫ টাকা থেকে এক ব্যক্তি ৫ টাকা ঋণ নিল।
যতক্ষন পর্যন্ত ঋণের ৫ টাকা দেশের মধ্যেই থাকছে, ততক্ষন দেশের মোট মুদ্রামান ১৫ টাকাই থাকে।
মানে প্রতিটি আপেলের মূল্য ৩ টাকাই থাকে। অর্থাৎ মুদ্রাস্ফীতি এখন পর্যন্ত ঘটেনি।

এইবার ধরুন, ঐ ব্যক্তি ঋণের ৫ টাকা ডালারে কনভার্ট করে বিদেশে গিয়ে খরচ করে ফেলেছে এবং সে ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম।
ডালার বা অন্য কোন মুদ্রায় কনভার্ট করা মানে হচ্ছে ঐ ৫ টাকা এখন আর টাকা নেই — সেটা ১ ডালার হয়ে গিয়েছে (ধরি, ১ ডালার = ৫ টাকা)।

এখন ঐ ১ ডালার কিন্তু আর বাংলাদেশে ব্যবহার করা সম্ভব না।
কারণ, যে দেশের মুদ্রা শুধুমাত্র সেই দেশেই ব্যবহার করা যাবে।
মানে ঐ ৫ টাকা বাংলাদেশে আর নেই।

অথচ, খাতা কলমের হিসেবে বাংলাদেশে মোট মুদ্রামান এখনো ঐ ১৫ টাকাই আছে।
কিন্তু বাস্তবে আছে ১০ টাকা।

ঐ খেলাপী ৫ টাকার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবার ৫ টাকা অতিরিক্ত ছাপানো হয়।
অর্থাৎ খাতা কলমে মোট মুদ্রামান হয়ে গেলো ২০ টাকা।
কিন্তু বাস্তবে আছে ১৫ টাকা।

⚠️ এখানে দুইটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটে:

যেহেতু নতুন করে টাকা ছাপানো হয়, সেহেতু মুদ্রাস্ফীতি হবে।
অর্থাৎ একই আপেলের দাম আগে ছিলো ৩ টাকা, এখন হয়ে যাবে ৪ টাকা।
উপরোক্ত সমস্যাটা খুব একটা প্রভাব ফেলত না যদি সত্যি সত্যি দেশে ২০ টাকা থাকতো।
সেক্ষেত্রে পণ্যের দাম বাড়ার সাথে সাথে মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বাড়ত।
কিন্তু সেটা তো হচ্ছে না। কারণ, দেশে তো ২০ টাকা নেই। আছে ১৫ টাকা।
মানে আমাদের কাছে আছে ১৫ টাকা, কিন্তু পণ্য কিনতে হচ্ছে এমন দামে যেন আমাদের কাছে ২০ টাকা আছে।