Skip to Content
🎓 English🔤 Grammarধ্বনি ও বর্ণ

🔖 ধ্বনি ও বর্ণ

বাংলা বর্ণমালায় স্বরবর্ণের লিখিত রূপ দুটি :

  1. পূর্ণরূপ ও
  2. সংক্ষিপ্ত রূপ।

1. স্বরবর্ণের পূর্ণরূপ : বাংলা ভাষা লেখার সময় কোনো শব্দে স্বাধীনভাবে স্বরবর্ণ বসলে তার পূর্ণরূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন:

🔸 শব্দের প্রথমে : অনেক, আকাশ, ইলিশ, উকিল, ঋণ, এক ।
🔸 শব্দের মধ্যে : বেদুইন, বাউল, পাঁউরুটি, আবহাওয়া ৷
🔸 শব্দের শেষে : বই, বউ, যাও ।

2. স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ : অ-ভিন্ন অন্য স্বরবর্ণগুলো ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে সংযুক্ত হলে পূর্ণরূপের বদলে সংক্ষিপ্ত রূপ পরিগ্রহ করে। স্বরবর্ণের এ ধরনের সংক্ষিপ্তরূপকে ‘কার’ বলে। স্বরবর্ণের ‘কার’-চিহ্ন ১০টি। যথা :

🔸 আ-কার ( া ) – মা, বাবা, ঢাকা।
🔸 ই-কার ( ি) – কিনি, চিনি, মিনি।
🔸 ঈ-কার ( ী) – শশী, সীমানা, রীতি।
🔸 উ-কার ( ু) – কুকুর, পুকুর, দুপুর
🔸 ঊ-কার ( ূ ) – ভূত, মূল্য, সূচি ।
🔸 ঋ-কার ( ৃ) – কৃষক, তৃণ, পৃথিবী ।
🔸 এ-কার ( ে) – চেয়ার, টেবিল, মেয়ে।
🔸 ঐ-কার ( ৈ) – তৈরি, বৈরী, নৈর্ঝত।
🔸 ও-কার ( ো) – খোকা, পোকা, বোকা।
🔸 ঔ-কার ( ৌ) – নৌকা, মৌসুমি, পৌষ।

বাংলা বর্ণমালায় ব্যঞ্জনবর্ণেরও দুটি লিখিত রূপ রয়েছে:

  1. পূর্ণরূপ
  2. সংক্ষিপ্ত রূপ।

1. ব্যঞ্জনবর্ণের পূর্ণরূপ: ব্যঞ্জনবর্ণের পূর্ণরূপ শব্দের প্রথমে, মধ্যে বা শেষে স্বাধীনভাবে বসে।

🔸 শব্দের প্রথমে : কবিতা, পড়াশোনা, টগর।
🔸 শব্দের মধ্যে : কাকলি, খুলনা, ফুটবল।
🔸 শব্দের শেষে : আম, শীতল, সিলেট।

2. ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ: অনেক সময় ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার জন্য ব্যঞ্জনবর্ণের আকার সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। ব্যঞ্জনবর্ণের এই সংক্ষিপ্ত রূপকে ‘ফলা’ বলে। ব্যঞ্জনবর্ণের ‘ফলা’-চিহ্ন ৬টি। যথা :

🔸 ন / ণ-ফলা ( ন / ণ ) – চিহ্ন, বিভিন্ন, যত্ন, / পূর্বাহ্ণ, অপরাহ্ণ।
🔸 ব-ফলা ( ব ) – পৰ্ব্ব, বিশ্ব, ধ্বনি।
🔸 ম-ফলা (ম) – পদ্মা, মুহম্মদ, তন্ময়।
🔸 য-ফলা ( ্য ) – খ্যাতি, ট্যাংরা, ব্যাংক।
🔸 র-ফলা ( ্র ) – ব্রুয়, গ্রহ। রেফ ( ́) - কর্ক, বর্ণ।
🔸 ল-ফলা (ল) – ক্লান্ত, গ্লাস, অম্লান ৷


ম-ফলা ও ব-ফলার উচ্চারণ

📌 ম-ফলার উচ্চারণ

🔸পদের প্রথমে ম-ফলা থাকলে সে বর্ণের উচ্চারণে কিছুটা ঝোঁক পড়ে এবং সামান্য নাসিক্যস্বর হয়। যেমন : শ্মশান (শঁশান্), স্মরণ (শঁরোন্) কখনো কখনো ‘ম’ অনুচ্চারিত থাকতেও পারে। যেমন : স্মৃতি (সৃতি বা স্মৃতি)।

🔸পদের মধ্যে বা শেষে ম-ফলা যুক্ত হলে উচ্চারণে সে বর্ণের দ্বিত্ব হয় এবং সামান্য নাসিক্যস্বর হয়। যেমন : আত্মীয় (আর্তিয়ো), পদ্ম (পদোঁ), বিস্ময় (বিশ্শঁয়), ভগ্নস্তূপ (ভশশৌস্তুপ), ভস্ম (ভগ্‌শোঁ), রশ্মি (রোশি।

🔸গ, ঙ, ট, ণ, ন বা ল বর্ণের সঙ্গে ম-ফলা যুক্ত হলে, ম-এর উচ্চারণ বজায় থাকে। যুক্ত ব্যঞ্জনের প্রথম বর্ণের স্বর লুপ্ত হয়। যেমন : বাগ্মী (বাগ্‌মি), মৃন্ময় (মৃন্ময়), জন্ম (জন্‌মো), গুল্ম (গুলমো) ।


📌 ব-ফলার উচ্চারণ

🔸শব্দের প্রথমে ব-ফলা যুক্ত হলে উচ্চারণে শুধু সে বর্ণের উপর অতিরিক্ত ঝোঁক পড়ে। যেমন : ক্বচিৎ (কোচিৎ), দ্বিত্ব (দিতো), শ্বাস (শাশ্), স্বজন (শজোন), দ্বন্দ্ব (দন্দো)।

🔸শব্দের মধ্যে বা শেষে ব-ফলা যুক্ত হলে যুক্ত ব্যঞ্জনটির দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়। যেমন : বিশ্বাস (বিশাশ্), পৰ্ব্ব (পক্‌কো), অশ্ব (অশো), বিশ্ব (বিলো) ।

🔸সন্ধিজাত শব্দে যুক্ত ব-ফলায় ব-এর উচ্চারণ বজায় থাকে। যেমন : দিগ্বিজয় (দিগ্‌বিজয়), দিগ্বলয় (দিগ্‌বলয়)।

🔸শব্দের মধ্যে বা শেষে ‘ব’ বা ‘ম’-এর সঙ্গে ব-ফলা যুক্ত হলে ব-এর উচ্চারণ বজায় থাকে। যেমন : তিব্বত (তিব্বত). লম্ব (লম্‌বো)। উৎ উপসর্গের সঙ্গে ব-ফলা যুক্ত হলে ব-এর উচ্চারণ বহাল থাকে। যেমন : উদ্বাস্তু (উদ্‌বাস্তু), উদ্বেল (উদ্‌বে) ৷


📌 উচ্চারণের স্থান ও বর্ণ বিভাজন

🔸 স্পর্শ ধ্বনি: ক থেকে ম পর্যন্ত পাঁচটি বর্গে মোট পঁচিশটি ধ্বনি। এসব ধ্বনির উচ্চারণে জিহ্বার সঙ্গে অন্য বাগযন্ত্রের কোনো কোনো অংশের কিংবা ওষ্ঠের সঙ্গে অধরের স্পর্শ ঘটে; অর্থাৎ এদের উচ্চারণে বাপ্রত্যঙ্গের কোথাও না কোথাও ফুসফুসতাড়িত বাতাস বাধা পেয়ে বেরিয়ে যায়। বাধা পেয়ে স্পষ্ট হয় বলে এগুলোকে বলে স্পর্শ ধ্বনি।

🔸 ক থেকে ম পর্যন্ত পঁচিশটি বর্ণ- সবগুলোই স্পর্শ বর্ণ । বর্গ কথাটির প্রতিশব্দ শ্রেণি, ইংরেজি প্রতিশব্দ class । সমজাতীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বস্তুসমূহ বা জীবসমূহ এক‌ই শ্রেণিতে পড়ে। যেমন, উপার্জন ক্ষমতা বিবেচনায় আমাদের সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ আছে- নিম্নবিত্ত(lower class), মধ্যবিত্ত(middle class) ও উচ্চবিত্ত (upper class)। তেমনি ২৫টি স্পর্শ বর্ণকে উচ্চারণ স্থান অনুসারে বর্গীকরণ (classification) করা হয়েছে। প্রতিটি বর্গ বা class-এ ০৫টি বর্ণ স্থান পেয়েছে। প্রতিটি বর্গ আবার আলাদা আলাদা দল (group) গঠন করে।

🔸 ক খ গ ঘ ঙ—কণ্ঠ্য শ্রেণি বা ক-বর্গ (ক-দল)
🔸 চ ছ জ ঝ ঞ—তালব্য শ্রেণি বা চ-বর্গ (চ-দল)
🔸 ট ঠ ড ঢ ণ— মূর্ধন্য শ্রেণি বা ট-বর্গ (ট-দল)
🔸 ত থ দ ধ ন— দন্ত্য শ্রেণি বা ত-বর্গ (ত-দল)
🔸 প ফ ব ভ ম—ওষ্ঠ্য শ্রেণি বা প-বর্গ (প-দল)।

প্রত্যেক শ্রেণির প্রথম বর্ণ দিয়ে বর্গের নামকরণ করা হয়েছে। বাকি ব্যঞ্জনবর্ণগুলো থেকে ০৫টি করে বর্ণ নিয়ে এমন শ্রেণি বা দল গঠন সম্ভব নয়। তাই, সেগুলো বর্গ গঠন করে না।

🔸 অঘোষ ধ্বনি : কোনো কোনো ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় না। তখন ধ্বনিটির উচ্চারণ গাম্ভীর্যহীন ও মৃদু হয়। এরূপ ধ্বনিকে বলা হয় অঘোষ ধ্বনি (Unvoiced)। যেমন— ক, খ ইত্যাদি। ঘোষ ধ্বনি ইত্যাদি।

🔸 ঘোষ: ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হলে ঘোষ ধ্বনি (Voiced) হয়। যেমন— গ, ঘ

🔸 অল্পপ্রাণ ধ্বনি : কোনো কোনো ধ্বনি উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয় না। এরূপ ধ্বনিকে বলা হয় অল্পপ্রাণ ধ্বনি (Unaspirated)। যেমন—ক, গ ইত্যাদি ।

🔸 মহাপ্রাণ ধ্বনি : কোনো কোনো ধ্বনি উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয়। এরূপ ধ্বনিকে বলা হয় মহাপ্রাণ ধ্বনি (Aspirated)। যেমন— খ, ঘ ইত্যাদি।

🔸 নাসিক্য বর্ণ: ঙ ঞ ণ ন ম – এ পাঁচটি বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির উচ্চারণে নাক ও মুখ দিয়ে কিংবা কেবল নাক দিয়ে ফুসফুস-তাড়িত বাতাস বের হয় বলে এদের বলা হয় নাসিক্য ধ্বনি এবং প্রতীকী বর্ণগুলোকে বলা হয় নাসিক্য বর্ণ ।


🚀 এক নজরে অল্পপ্রাণ, মহাপ্রাণ, অঘোষ, ঘোষ, নাসিক্য বর্ণ।
উচ্চারণের স্থান/ বর্গীয়অল্পপ্রাণমহাপ্রাণনাসিক্য
অঘোষঘোষঅঘোষঘোষ
কন্ঠ্য/ ক বর্গীয়
তালব্য/ চ বর্গীয়
মূর্ধন্য/ ট বর্গীয়
দন্ত্য/ ত বর্গীয়
ওষ্ঠ্য/ প বর্গীয়
Last updated on