Skip to Content
🧬 Science🧪 রসায়নপরমাণুর গঠন

পরমাণুর গঠন

মূল কণিকা

মূল কণিকার নামপ্রতীকপ্রকৃত আধান বা চার্জপ্রকৃত ভরআপেক্ষিক আধানআপেক্ষিক ভর
ইলেকট্রনe-1.60 ×10⁻¹⁹ কুলম্ব9.110 × 10⁻²⁸ g-10
প্রোটনp+1.60 ×10⁻¹⁹ কুলম্ব1.673 × 10⁻²⁴ g+11
নিউট্রনn01.675 × 10⁻²⁴ g01

রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল

১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড সৌরমন্ডলের সাথে সাদৃশ্য রেখে পরমাণুর গঠন সম্পর্কে নিজস্ব মতবাদ উপস্থাপন করেন। এ মতবাদটিকে রাদারফোর্ডের সোলার সিস্টেম এটম মডেল বলা হয়ে থাকে। এ মতবাদের উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলো হলো:

  1. সকল পরমাণু অতিশয় ক্ষুদ্র গোলাকৃতি কণা। এর দুটি অংশ রয়েছে যথা:
    • কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস
    • কেন্দ্র বহির্ভূত অঞ্চল।
  2. পরমাণুর কেন্দ্রস্থলে একটি ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট ভারী বস্তু বিদ্যমান। এই ভারী বস্তুকে পরমাণুর কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস বলে। পরমাণুর মোট আয়তনের তুলনায় নিউক্লিয়াসের আয়তন অতি নগণ্য।
  3. পরমাণুর প্রায় সবটুকু ভর এর নিউক্লিয়াসে পুঞ্জীভূত। তাই মোটামুটিভাবে নিউক্লিয়াসের ভরই পারমাণবিক ভর।
  4. সৌরমন্ডলে সূর্যের চারদিকে আবর্তনীয় গ্রহসমুহের মত পরমাণুতে নিউক্লিয়াসের চতুর্দিকে কক্ষপথে কতগুলো ঋণাত্মক কণিকা সর্বদা ঘূর্ণায়মান থাকে। এদের ইলেকট্রন বলে।
  5. পরমাণু বিদ্যুৎ নিরপেক্ষ। তাই পরমাণুতে ধনাত্মক চার্জের সংখ্যা এবং পরিক্রমণশীল ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রনের সমান।
  6. নিউক্লিয়াস ও ইলেকট্রনের মধ্যে বিরাজিত কেন্দ্রমুখী স্থির বিদ্যুৎ আকর্ষণ বল ও ঘূর্ণনের ফলে সৃষ্ট কেন্দ্রবিমুখী বলের মান সমান ও বিপরীতমুখী।

রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের সীমাবদ্ধতা

  1. সৌরমন্ডলের গ্রহসমূহ সামগ্রিকভাবে আধানহীন অথচ ইলেকট্রনসমূহ ঋণাত্মক আধানযুক্ত।
  2. ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্বানুসারে কোনো আধানযুক্ত বস্তু বা কণা কোনো বৃত্তাকার পথে ঘুরতে থাকলে তা ক্রমাগত শক্তি বিকিরণ করবে এবং তার আবর্তনচক্র ধীরে ধীরে ছোট হতে থাকবে। সুতরাং ইলেকট্রনসমূহ ক্রমশ শক্তি হারাতে হারাতে নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করবে। অর্থাৎ রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল অনুসারে পরমাণু সম্পূর্ণভাবে একটি অস্থায়ী অবস্থা প্রাপ্ত হবে। অথচ পরমাণু হতে ক্রমাগত শক্তি বিকিরণ বা ইলেকট্রনের নিউক্লিয়াসে প্রবেশ কখনই ঘটে না।
  3. পরমাণুর বর্ণালি গঠনের কোনো সুষ্ঠু ব্যাখ্যা এ মডেল দিতে পারে না।
  4. আবর্তনশীল ইলেকট্রনের কক্ষপথের আকার ও আকৃতি সম্বন্ধে কোনো ধারণা রাদারফোর্ডের মডেলে দেয়া হয় নি।
  5. একাধিক ইলেকট্রনবিশিষ্ট পরমাণুতে ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসকে কিভাবে পরিভ্রমণ করে তার কোনো উল্লেখ এ মডেলে নেই।

বোরের পরমাণু মডেল

১৯১৩ সালে বিজ্ঞানী নীল্‌স বোর রাদারফোর্ড পরমানু মডেলের ভুলগুলো সংশোধন করে পরমাণুর গঠন সম্পর্কে মতবাদ দেন। কোয়ান্টাম তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত বোর পরমানু মডেল নিম্নরূপ:

  1. শক্তিস্তর সম্পর্কিত মতবাদঃ পরমানুতে ইলেকট্রন সমূহ নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কক্ষপথে ঘুরতে থাকে। এই কক্ষপথগুলোকে শক্তিস্তর বলে। কক্ষপথে অবস্থানের সময় ইলেকট্রন কোনো শক্তি শোষণ করে না। এই শক্তিস্তরগুলোকে K, L, M, N দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
  2. কৌনিক ভরবেগ সম্পর্কিত প্রস্তাবঃ কোনো নির্দিষ্ট শক্তিস্তরে ইলেকট্রনের কৌনিক ভরবেগের মান নির্দিষ্ট যা h/2π এর পূর্ণসংখ্যার সরল গুনিতক। যদি একটি ইলেকট্রনের ভর m, গতিবেগ v এবং বৃত্তাকার কক্ষপথের ব্যাসার্ধ r হয় তবে এর কৌনিক ভরবেগ হবে,
mvr=nh2π mvr = \frac{nh}{2\pi}

এখানে:
h = প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক = 6.63 × 10⁻³⁴ Js
m = ইলেকট্রনের ভর = 9.11 × 10⁻³¹ kg
v = ইলেকট্রনের রৈখিক বেগ
r = কক্ষপথের ব্যাসার্ধ
n = কোয়ান্টাম সংখ্যা

  1. শক্তির শোষণ বা বিকিরণ মতবাদঃ ইলেকট্রন যখন শক্তির এক স্তর থেকে অন্য স্তরে গমন করে তখন শক্তির শোষন বা বিকিরন ঘটে। ইলেকট্রন নিম্ন শক্তিস্তর থেকে উচ্চ শক্তিস্তরে গমন করলে শক্তি শোষণ ঘটে। আবার উচ্চ শক্তিস্তর থেকে নিম্ন শক্তিস্তরে গমন করলে শক্তি বিকিরণ ঘটে।

বোরের পরমাণু মডেলের সীমাবদ্ধতা

  1. এক ইলেকট্রনবিশিষ্ট পরমানুসমূহের বর্ণালী বোর পরমানু মডেল দ্বারা ব্যাখ্যা করা গেলেও একাধিক ইলেকট্রনবিশিষ্ট পরমাণুর বর্ণালী এই মডেল দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না।
  2. বোর পরমানু মডেল অনুসারে দুটি ভিন্ন শক্তিস্তরের মধ্যে ইলেকট্রন স্থানান্তর ঘটলে বর্ণালীর কেবলমাত্র একটি বর্ণালী সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু সূক্ষ্ম বর্ণালীবিক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে একটি রেখার পাশে কতকগুলো সূক্ষ্ম রেখা পাওয়া যায়। বোর মডেল এই রেখাগুলো ব্যাখ্যা করতে পারে না।
  3. বোর মডেল অনুসারে পরমানুর প্রতিটি ইলেকট্রনের অবস্থা ও গতিবেগ সুনির্দিষ্ট। কিন্তু হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি অনুসারে ইলেকট্রনের অবস্থান ও গতিবেগ একত্রে নির্ণয় করা সম্ভব নয়।

রাদারফোর্ড ও বোর পরমাণু মডেলের তুলনা

  1. রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলে আবর্তনশীল ইলেকট্রনের কক্ষপথের আকার সম্পর্কে কোন ধারণা দেওয়া হয়নি। অপরদিকে, বোরের পরমাণু মডেলে নির্দিষ্ট কিছু স্থির কক্ষপথের ধারণা দেওয়া হয়েছে।
  2. রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল অনুসারে পরমাণু সুস্থিত নয়। এ মডেল অনুসারে পরমাণুর স্থায়িত্ব হচ্ছে ধনাত্মক চার্জযুক্ত নিউক্লিয়াস ও ঋনাত্বক চার্জ যুক্ত ইলেকট্রনের মধ্যে স্থির বৈদ্যুতিক কেন্দ্রমুখী ও কেন্দ্রবিমুখী আকর্ষণ বল যা পরস্পর সমান। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেছে নিউক্লিয়াসের চারপাশে আবর্তনশীল ইলেকট্রন ক্রমাগত শক্তি বিকিরণ করার কারণে আবর্তন চক্র ধীরে ধীরে হ্রাস পায় এবং ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসে পতিত হয়। কিন্তু বোরের পরমাণু মডেল অনুসারে পরমাণু স্থায়ী। কারণ, ইলেকট্রন সমূহ একটি নিদিষ্ট স্থির কক্ষপথে অবস্থানকালে কোন শক্তি বিকিরণ বা শোষণ করে না। যার কারণে ইলেকট্রনটি নিউক্লিয়াসে পতিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকেনা।
  3. আলফা কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষা রাদারফোর্ডে পরমাণু মডেলের মূল ভিত্তি। কিন্তু ম্যাক্সপ্লাঙ্ক ও আইনস্টাইনের আলোক সম্পর্কিত কোয়ান্টাম তত্ত্ব হচ্ছে বোর পরমাণু মডেলের মূল ভিত্তি।
  4. রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল সৌরজগতের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। কিন্তু বোরের পরমাণু মডেলে এরূপ তুলনা করা হয়নি।
  5. রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলে বর্ণালী সম্পর্কে কোন ধারণা দেওয়া হয়নি। কিন্তু বোরের পরমাণু মডেলে বর্ণালী সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে।
  6. বোর পরমাণু মডেল হতে শক্তিস্তরের ব্যাসার্ধ ও বিভিন্ন শক্তিস্তরে ইলেকট্রনের শক্তি নির্ণয় করা সম্ভব। কিন্তু রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল দ্বারা এরূপ সম্ভব হয় না।

পরমাণুর শক্তিস্তর

পরমাণুর ইলেকট্রনগুলো বিভিন্ন নির্দিষ্ট শক্তিস্তরে অবস্থিত থাকে। এই শক্তিস্তরগুলোকে K, L, M, N ইত্যাদি দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

পরমাণুর শক্তিস্তরের ক্রম

1s < 2s < 2p < 3s < 3p < 4s < 3d < 4p < 5s < 4d < 5p < 6s < 4f < 5d < 6p < 7s < 5f < 6d < 7p < 8s

ইলেকট্রন বিন্যাসের সাধারণ নিয়মের কিছু ব্যতিক্রম

সাধারণভাবে দেখা যায় যে, একটি উপশক্তিস্তরের p ও d এর অরবিটালগুলো অর্ধেক পূর্ণ (p³, d⁵) বা সম্পূর্ণরূপে পূর্ণ (p⁶, d¹⁰) হলে, সে ইলেকট্রন বিন্যাস স্থিতিশীল হয়। তাই Cr (24) এর ইলেকট্রন বিন্যাস স্বাভাবিকভাবে হওয়ার কথা:

Cr(24)1s22s22p63s23p63d44s2 Cr (24) → 1s² 2s² 2p⁶ 3s² 3p⁶ 3d⁴ 4s²

কিন্তু 3d অরবিটাল স্থিতিশীল অবস্থানে পৌঁছায় না, কারণ এটি অর্ধেক পূর্ণ নয়। তাই 4s অরবিটাল থেকে একটি ইলেকট্রন 3d অরবিটালে চলে যায়, ফলে ক্রোমিয়ামের ইলেকট্রন বিন্যাস হয়:

Cr(24)1s22s22p63s23p63d54s1 Cr(24) → 1s² 2s² 2p⁶ 3s² 3p⁶ 3d⁵ 4s¹
Last updated on