Skip to Content
🌍 এক নজরে বিশ্ব🎶 এক গানে ৬৪ জেলা

🔖 এক গানে ৬৪ জেলা

ফরিদপুরের ফরিদ আর দিনাজপুরের দিনা, দুজন চট্টগ্রামের বাদামতলী থেকে ২ টাকার বাদাম কিনে টিপতে টিপতে তাদের মধ্যে টিপিস টিপস হইয়া যায়। এরা দুজন সিলেটের বিয়ানীবাজার গিয়া চিন্তা করে দুজন দুজনরে বিয়া করবে এই বিয়া উপলক্ষ্যে মৌলিবীবাজারের মৌলিবী, মুন্সীগঞ্জের মুন্সী আর মহিলাদের পক্ষ থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বেগম সাহেবারে দাওয়াত করছে;

এদিকে ফরিদপুরের ফরিদের কিছু নাই তবে ফেনী ছাগনাইয়ার দুইডা ছাগল ছাড়া। কি ছাড়া?- ছাগল ছাড়া।
এর পরণে আর চলাফেরায় ছিলো চাপাইনবাবগঞ্জের নবাবের মতো। একবার জোরে-স্বরে বলেন- কিসের মতো? নবাবের মতো, নবাবের মতো; টাঙ্গাইল থাইকা একখান তাতের শাড়ি, যশোর বেনাপোল থেকে বেনারশী, রংপুর থেকে রং আর আলতাদীঘী থেকে আলতা আইনা দিনাজপুরের দীনারে বিয়া কইরা ফেলাইছে।
বিয়ের প্রথম প্রথম ফরীদ আর দীনা দুজন লিপের সাথে লিপ মিলিয়ে ঘুমাতো, বিয়ের কিছুদিন পর দুজন হিপের সাথে হিপ মিলিয়ে ঘুমায়। এরপরও বিয়ের অনেকদিন পর দুজনকে খুব সুখী দেখা গেলো। বলেন তো কেন? কারণ কথায় আছে হীপ হীপ হু-র-রে!

এদিকে দীনার বাবা সিরাজগঞ্জের সিরাজ মিয়া ছিলো ম্যালা টাকা পয়সার মালিক। কারণ রংপুরে ছিলো তার রঙের ব্যবসা আর সুনামগঞ্জে ছিলো তার বহুত সুনাম। এই মিয়া চিন্তা করছিলো তার মাইয়াডারে ঝাকঝমক কইরা বিয়া দিবো। যেমন মাগুরা জেলা থেকে মাগুর মাছ, সাতক্ষীরা জেলা থেকে সাত মণ দুধ আইন্যা, কুড়িগ্রাম থেকে কুড়িটা খাশি, গাইবান্ধা থেকে কমছে কম এক ডজন গাই কিন্যা, বরিশাল থেকে বরিনাড়ু বানাইয়া, লালমনির হাট থেকে লাল রঙের বেনারশি কিন্যা, খুলনার বাগেরহাটের বাঘের মতো একটা পোলার লগে তার মাইয়ারে বিয়া দিবে। কিন্তু এই ফরিদ, চুয়াডাঙার জেলার মতো চুয়া চুয়া কথা কইয়া পটুয়াখালী জেলার ভাষায় পটাইয়া পটাইয়া দীনারে বিয়া কইরা ফালাইছে। জোরে বলেন- বাপরে বাপ!

বিয়ের পর, দীনা একদিন বলছে- আচ্ছা, আজকে আমার শরীরটানা খুব খারাপ। একদম ভালো লাগছে না।
ফরিদ বলছে- আচ্ছা, আমি তো ভেবেছিলাম আজকে রেস্টডেন্টে খেতে যাবো।
আরে, না! আমি এমনি ইয়ারকি করছিলাম। আমি সব ঠিকঠাক আছি।
ও আচ্ছা, আমিও একটু ইয়ারকি করছিলাম আরকি! চলো উঠো রুটি বানাও।

এদিকে, মাইয়ার কপালে সুখ নাই,
সিরাজ মিয়া পাবনা গিয়া পরল ভাবনায়।
নোয়াখালী আইসা চিন্তা করে খালি খালি কাইন্দা লাভ নাই।
যাই ভোলা জেলায় গিয়া দেখি মনের দু:খটা ভুলা যায় কিনা?
ভোলা যাওয়ার পথে মাঝখানে বরিশালের ঝালকাঠিতে আইসা মনের ঝালটা আরো বেশি বাইরা গেছে। জোরে বলেন- হাইরে হায়!

এই কথাতো আর ঢাকা শহরে ঢাকা থাকলো না। খবরের কাগজ, পত্র-পত্রিকায় সব জায়গায় ছাপা হইয়া গেলো।
তো একদিন দীনা ফরিদকে বলছে- আচ্ছা আমি যদি কখনো হারিয়ে যাই তাহলে তুমি কি করবে?
পত্রিকায় তোমার ছবি ছাপিয়ে দিবো।
খুশি হয়ে দীনা বলছে- তাহলে তো তুমি সেখানে কি লিখবে?
লিখবো- যে পাবে তার।

এ খবর চলে গেলো জামালপুরের জামালের কানে। জামালপুরের জামাল, ময়মনসিংহের মমিন, মানিকগঞ্জের মানিকের মাধ্যমে এই খবরটা দিয়া দিলো গোপালগঞ্জের গোপালের কাছে।
গোপালগঞ্জের গোপাল, নারায়ণগঞ্জের নারায়ণ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্রাহ্মণ, শিপপুরের শিপ, হরিপুরের হরি, মহাদেবপুরের মহাদেব, পাবানা রাধানগরের রাধা আর কৃষ্ণপুরের কৃষ্ণরে লইয়া হিন্দু ধর্মের প্রধান ঠাকুরগাঁও-এর ঠাকুরের কাছে রওনা দিছে। জোরে বল- হরিবল!
এই কয়জন হিন্দু মিল্যা কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানা থেকে আরো চৌদ্দজন হিন্দু সংগ্রহ করে একটা কমিটি গঠন কইরা বলে ঘটানাটা সাবার মাঝে জানাইয়া দাও।

এই ঘটনা চলে গেলো গাজীপুরের গাজী সাহেবের কাছে। তিনি বললেন আমি এখন ব্যস্ত আছি। আপনারা টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের মির্জা সাহেবের কাছে যান।
মির্জাপুরের মির্জা বললেন- আমার ছোট ছেলে নরসংদীর নরাধম, শেরপুর থেকে একসের চিনি চুরি করিয়া বগুরার সারিয়া কান্দি থানায় আসামিদের সাথে সারিবদ্ধ হইয়া দাঁড়ায় রয়েছে। আপনারা আপাতত হাজীগঞ্জের হাজী সাহেবের কাছে যান।

হাজীগঞ্জের হাজী সাহেব বললেন- ফরীদ আর দীনা যে বিয়াটা করলো সেটা কি শরিয়তপুরের শরিয়ত মতো ঠিক আছে কিনা?
যদি ঠিক না থাকে- তাহলে মেহেরপুর থেকে মেহেরআলীরে ডাইকা পাঠাও। কারে ডাইকা পাঠাবে? মেহেরআলী।
এরে খাগরা ছরি-তে পাঠায়ে দাও। সেখান থেকে কমছে কম পাঁচ থেকে ছয়টা ছড়ি আইন্যা ফরিদ নামের পোলাডারে সিলেট জেলার শায়েস্থাগঞ্জ নিয়া ভালো করে শায়েস্থা করে নিয়ে আসো। জোরে বলেন- বাবা!

শায়েস্থা করার আগে ফরিদকে বলা হলো- এই! তোকে এখন যে মারটা দেওয়া হবে এই মার খেয়ে তুই মারাও যেতে পারিস।
তার আগে তোর শেষ ইচ্ছা কি বল- তুই কার সাথে দেখা করতে চাস? আমার বউয়ের সাথে।
হায়! হায়!! হতচ্ছড়া! মায়ের সাথে দেখা করতে মন চাইনা?
ভাইরে! পুন:জন্ম তো সাথে সাথে মায়ের দেখা পামু। কিন্তু বউয়ের জন্য পঁচিশ বছর অপেক্ষা।
মারধর শেষ, ফরিদ খুব অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি আছে।
অপারেশনের বেডে দীনাকে বলছে- আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে তুমি ডাক্তার বাবুকে বিয়ে করে নিও।
ওমা! এ সময় এসব কি কথা বলছো তুমি?
অ্যাঁ! ও বেটা আমাকে মেরে দিবে আর আমি ওকে ছেড়ে দিবো?

এরপর ফরিদপুরের ফরীদ বর্তমানে মেলা টাকা পয়াসার মালিক। নিলফামারী থেকে নীল রঙের একটা সুতির পাঞ্জাবী কিন্যা জয়পুরহাটের জয়নব নামের বান্ধবীরে নিয়া সৈয়দপুরের সৈয়দআলীর মোড়ে চা খাইতে আসছে। এই জায়গায় চা খাওয়ার পরে আমার ভামুর হাটে আসলো সাংসারিক জিনিসপত্র কিনতে ধামা কিনার জন্য। সেখানে যখন আমার ফরিদের সাথে দেখা হলো- আমি প্রশ্ন করলাম, ফরীদ কী খবর?
তাৎক্ষনিকভাবে আমাকে ফরীদ বিষন্নমুখে উত্তর দিলো-
“ বউয়ের জ্বালায় ইচ্ছা করে গাড়ির নিচের মারি যা ভাই, গাড়ির নিচে মারি যা; কেমনে বিয়া করলাম বাপরে বাপ? হায়রে কেমনে বিয়া করলাম বাপরে বাপ?”

Last updated on