জীবকোষ
🧫 জীবকোষ
কোষ: বৈষম্য ভেদ্য পর্দা দ্বারা আবৃত এবং জীবজ ক্রিয়াকলাপের একক যা অন্য সজীব মাধ্যম ব্যতিরেকেই নিজের প্রতিরূপ তৈরি করতে সক্ষম তাকে কোষ বলে।
নিউক্লিয়াসের সংগঠনের ভিত্তিতে কোষ দুই ধরনের:
- আদি কোষ
- প্রকৃত কোষ
আদি কোষ: এ ধরনের কোষে সংগঠিত কোনো নিউক্লিয়াস থাকে না। নিউক্লিয়বস্তু সাইটোপ্লাজমে ছড়ানো থাকে। এসব কোষে মাইটোকন্ড্রিয়া, প্লাস্টিড, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম ইত্যাদি অঙ্গাণু থাকে না তবে রাইবোসোম উপস্থিত থাকে। নীলাভ সবুজ শৈবাল, ব্যাকটেরিয়া এ ধরনের কোষ
প্রকৃত কোষ: এসব কোষের নিউক্লিয়াস সুগঠিত অর্থাৎ নিউক্লিয়ার ঝিল্লি দ্বারা নিউক্লিয়কতু পরিবেষ্টিত ও সুসংগঠিত। শৈবাল থেকে শুরণ করে সপুষ্পক উদ্ভিদ এবং অ্যামিবা থেকে সর্বোন্নত প্রাণিদেহেও এ ধরনের কোষ থাকে ।
দেহকোষ: বহুকোষী জীবের দেহ গঠনে এসব কোষ অংশ গ্রহণ করে। মাইটোটিক ও অ্যামাইটোটিক বিভাজনের মাধ্যমে কোষ বিভাজিত হয়। বিভিন্ন তন্ত্র ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠনে দেহকোষ অংশ নেয় ৷
জনন কোষ: যৌন জনন ও জনুক্রম দেখা যায় এমন জীবে জনন কোষ উৎপন্ন হয়। মিয়োসিস পদ্ধতিতে জনন মাতৃকোষের বিভাজন ঘটে এবং জনন কোষ উৎপন্ন হয়। জনন কোষে ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃজনন কোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেক থাকে।
প্রাণী কোষ

উদ্ভিদ কোষ

একটি আদর্শ উদ্ভিদকোষ প্রাধানত দুটি অংশ নিয়ে গঠিত- কোষপ্রাচীর এবং প্রোটোপ্লাজম।
1️⃣ কোষপ্রাচীর
উদ্ভিদকোষের ক্ষেত্রে কোষঝিল্লির বাইরে জড় পদার্থ দিয়ে তৈরি একটি পুরু প্রাচীর থাকে, এক কোষপ্রাচীর বলে। এটি সেলুলোজ দ্বারা গঠিত। প্রাণিকোষে এ ধরণের প্রাচীর থাকে না। প্রাণিকোষের আবরণটি প্লাজমা পর্দা দ্বারা গঠিত। কোষের সজীব অংশকে রক্ষা করা এবং কোষের সীমারেখা নির্দেশ করা কোষপ্রাচীরের প্রধান কাজ।
2️⃣ প্রোটোপ্লাজম
কোষের ভেতরে যে অর্ধস্বচ্ছ, থকথকে জেলির ন্যায় কভু থাকে তাকে প্রোটোপ্লাজম বলে। একে জীবনের ভিত্তি বলা হয়। একটি প্রোটোপ্লাজম প্রধানত কোষঝিল্লি, সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস সমন্বয়ে গঠিত।
🅰 কোষঝিল্লি (Plasma Membrane): পুরো প্রোটোপ্লাজমকে ঘিরে যে নরম পর্দা দেখা যায় তাকে কোষঝিল্লি বা প্লাজমামেমব্রেন বলে। এটি কোষের ভিতর ও বাইরের মধ্যে পানি, খনিজ পদার্থ ও গ্যাস এর চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
🅱 সাইটোপ্লাজম (Cytoplasm): প্রোটোপ্লাজম থেকে নিউক্লিয়াস বাদ দিলে যে অর্ধতরল অংশটি থাকে, তাকে সাইটোপ্লাজম বলে। এর প্রধান কাজ কোষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঙ্গানুগুলোকে ধারণ করা। সাইটোপ্লাজমের অভ্যন্তরে অবস্থিত কোষের বিভিন্ন জৈবনিক ক্রিয়াকলাপের সাথে সংশ্লিষ্ট সজীব বস্তুসমূহকে একত্রে সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু বলা হয়। একটি আদর্শ কোষে নিম্মলিখিত অঙ্গাণুগুলো দেখা যায়:
সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণুসমূহ:
- মাইটোকন্ড্রিয়া
- প্লাস্টিড
- গলজি বডি
- এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম
- লাইসোজোম
- সেন্ট্রিওল
- কোষ গহ্বর
- রাইবোসোম
- সেন্ট্রোজোম
মাইটোকন্ড্রিয়া

সজীব উদ্ভিদ ও প্রাণিকোষের সাইটোপ্লাজমে বিক্ষপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট দন্ডাকার অঙ্গাণুগুলোকে মাইটোকন্ড্রিয়া বলে(এক বচনে মাইটোকন্ড্রিয়ন)। এরা দন্ডাকার, বৃত্তাকার বা তারকাকার হতে পারে। প্রতিটি মাইটোকন্ড্রিয়ন দ্বিস্তর পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে। এর বহিঃপর্দাটি মসৃণ। কিন্তু অন্তঃপর্দাটি আঙুলের মতো অনেক ভাঁজ সৃষ্টি করে এদেরকে ক্রিস্টি বলে। এই অঙ্গাণুর অভ্যন্তরে শক্তি উৎপাদনের প্রায় সকল বিক্রিয়া ঘটে থাকে। এর প্রধান কাজ শ্বসন প্রক্রিয়ার সাহয্যে শক্তি উৎপাদন করা। এ জন্য মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের ‘পাওয়ার হাউস’ বলে। সবুজ উদ্ভিদকোষে এর সংখ্যা বেশি তবে প্রাণীর যকৃত কোষে এর সংখ্যা সহস্রাধিক।
প্লাস্টিড

সজীব উদ্ভিদকোষের সাইটোপ্লাজমে বর্ণহীন অথবা বর্ণযুক্ত গোলাকার বা ডিম্বাকার অঙ্গাণুকে প্লাস্টিড বলে। সাধারণত প্রাণিকোষে প্লাস্টিড নেই। এই অঙ্গাণুটি উদ্ভিদকোষের ইউনিক বৈশিষ্ট্য। প্লাস্টিড তিন ধরণের- ক্লোরোপ্লাস্ট, ক্রোমোপ্লাস্ট এবং লিউকোপ্লাস্ট।
- ক্লোরোপ্লাস্ট: সবুজ রঙের প্লাস্টিডকে ক্লোরোপ্লাস্ট বলে। ক্লোরোফিল নামক রঞ্জক পদার্থ থাকায় সবুজ বর্ণ ধারণ করে।
- ক্রোমোপ্লাস্ট: বিভিন্ন রঙের প্লাস্টিড (সবুজ ছাড়া)।
- লিউকোপ্লাস্ট(বর্ণহীন প্লাস্টিড): যেসব প্লস্টিডে কোন রঞ্জক পদার্থের থাকে না, তাদের লিউকোপ্লাস্ট বলে। যে সব কোষে সূর্যের আলো পৌছায় না, (যেমন: মূল, ভ্রূণ, জননকোষ ইত্যাদি) সেখানে এদের পাওয়া যায়। এদের প্রধান কাজ খাদ্য সঞ্চয় করা। আলোর সংস্পর্শে এলে লিউকোপ্লাস্ট ক্লোরোপ্লাস্টে রূপান্তরিত হতে পারে।
গলজি বস্তু
গলজি বস্তু প্রধানত প্রাণিকোষে পাওয়া যায়। হরমোন নিঃসরণেও এর ভূমিকা লক্ষ করা যায়। কখনো কখনো এরা প্রোটিন সঞ্চয় করে রাখে।
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম
সাইটোপ্লাজমে একক ঝিল্লিবেষ্টিত জালিকাকার অঙ্গাণু থাকে যা এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিলাম। কোষে মসৃণ ও অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম পাওয়া যায়।
লাইসোসোম
লাইসোসোম জীব কোষকে জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে এবং এর উৎসেচক আগত জীবাণুগুলোকে হজম করে ফেলে।
কোষগহ্বর
সাইটোপ্লাজমে তরল পদার্থপূর্ণ(কোষরস) ছোট-বড় গহ্বর থাকে তাদের কোষগহ্বর বলে। প্রাণিকোষে সাধারণত কোষগহ্বর থাকে না। তবে কোনো কোন কোষে যদি থাকে তা আকারে খুব ছোট। উদ্ভিদকোষে কোষগহ্বর বেশি থাকে এবং আকারে বড় হয়। এ কারণে উদ্ভিদ কোষে নিউক্লিয়াস একপাশে এবং প্রাণিকোষে নিউক্লিয়াস মাঝখানে থাকে। নানা প্রকার জৈব অ্যাসিড, লবণ, শর্করা, আমিষ ইত্যাদি কোষ গহ্বরে দ্রবীভূত অবস্থায় থেকে কোষরস প্রস্তুত করে।
রাইবোসোম
সাইটোপ্লজমে মুক্ত অবস্থায় বা এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের গায়ে দানার মতো রাইবোজোম থাকে। রাইবোজোমে প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়।
সেন্ট্রিওল ও সেন্ট্রোজোম
প্রাণিকোষের নিউক্লিয়াসের কাছে যে দুটি ফাঁপা নলাকার বা দণ্ডাকার অঙ্গাণু দেখা যায়, তাদেরকে সেন্ট্রিওল বলে। সেন্ট্রিওলের চারপাশে অবস্থিত গাঢ় তরলকে সেন্ট্রোস্ফিয়ার এবং সেন্ট্রোস্ফিয়ারসহ সেন্ট্রিওলকে সেন্ট্রোজোম বলে।
🅾 নিউক্লিয়াস (Nucleus)

প্রোটোপ্লাজমে পর্দা দিয়ে বেষ্টিত সর্বাপেক্ষা ঘন বস্তুকে নিউক্লিয়াস বলে। প্রতিটি নিউক্লিয়াস চারটি অংশের সমন্বয়ে গঠিত হয়। নিউক্লিয়াস-এর বিভিন্ন অংশের গঠন বৈশিষ্ট্য নিচে বর্ণনা করা হলো :
-
নিউক্লিয়ার ঝিল্লি: নিউক্লিয়াসকে ঘিরে রাখে যে ঝিল্লি তাকে নিউক্লিয়ার ঝিল্লি বা কেন্দ্রিকা ঝিল্লি বলে। এটি দ্বিস্তর বিশিষ্ট ঝিল্লি। এ ঝিল্লি লিপিড ও প্রোটিন সমন্বয়ে গঠিত। এ ঝিল্লিতে মাঝে মাঝে কিছু ছিদ্র থাকে একে নিউক্লিয়ার রন্ধ্র বলে।
-
নিউক্লিওপ্লাজম: কেন্দ্রিকা ঝিল্লির অভ্যন্তরে জেলির ন্যায় কতু বা রসকে কেন্দ্রিকারস বা নিউক্লিওপ্লাজম বলে। এর মধ্যে ক্রোমাটিন তন্তু ও নিউক্লিওলাস থাকে।
-
নিউক্লিওলাস: কেন্দ্রিকারসের মধ্যে ক্রোমোসোমের সাথে লাগানো গোলাকার বস্তুকে নিউক্লিওলাস বা কেন্দ্রিকাণু বলে। সাধারণত প্রতি নিউক্লিয়াসে একটি নিউক্লিওলাস থাকে।
-
ক্রোমাটিন জালিকা: নিউক্লিয়াসের ভিতরে সুতার ন্যায় কুন্ডলী পাকানো বা খোলা অবস্থায় যে অঙ্গাণুটি রয়েছে তাই ক্রোমাটিন তন্তু বলে। এটি জীবের বহন করে পরবর্তী প্রজম্মে নিয়ে যায়। এরা কোষের বৃদ্ধি বা যেকোনো ক্রিয়া-বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।