Skip to Content
🧬 Science🧪 রসায়নপদার্থের গঠন

পদার্থের গঠন

পদার্থ: যার ভর আছে, আয়তন আছে, স্থান দখল করে এবং বলপ্রয়োগে বাঁধা প্রদান করে, তাদেরকে পদার্থ বলে।
পদার্থ দুই প্রকার:

  1. মৌলিক পদার্থ (যেমন: হাইড্রোজেন)
  2. যৌগিক পদার্থ (যেমন: H₂O - পানি)

মৌলিক পদার্থ

যেসব পদার্থকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করলে অন্য কোনো পদার্থ পাওয়া যায় না, তাদেরকে মৌলিক পদার্থ বলে।
উদাহরণ: অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, লোহা, রুপা ইত্যাদি।

যৌগিক পদার্থ

যে পদার্থকে বিশ্লেষণ করলে দুই বা তার বেশি ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়, তাকে যৌগিক পদার্থ বলে।

  • উদাহরণ: H₂O (পানি), NaCl (লবণ)

মিশ্র পদার্থ: যে পদার্থ দুই বা ততোধিক বিশুদ্ধ পদার্থের ভৌত মিশ্রণে গঠিত হয়, কিন্তু রাসায়নিকভাবে নতুন কোনো পদার্থ তৈরি হয় না, তাকে মিশ্র পদার্থ বলে। মিশ্র পদার্থের উপাদানগুলো নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বজায় রাখে।

ক্ষুদ্রতম কণার মতবাদ

গ্রিক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস (খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ অব্দ) সর্বপ্রথম বলেন, “সকল পদার্থ অসংখ্য ক্ষুদ্র, অবিভাজ্য কণিকা দ্বারা গঠিত”। তিনি এই ক্ষুদ্রতম কণাকে “পরমাণু” (Atom) নামে অভিহিত করেন।

“Atomos” গ্রিক শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ “অবিভাজ্য”।

ডেমোক্রিটাসের মতবাদ:
  • সকল পদার্থ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দ্বারা গঠিত। তিনি এই ক্ষুদ্রতম কণার নাম দেন পরমাণু বা এটম।
  • এই কণাগুলো আর বিভক্ত করা সম্ভব নয়।

তবে প্লেটো (Plato) এবং অ্যারিস্টটল (Aristotle) এই মতবাদের বিরোধিতা করেন। অ্যারিস্টটল মনে করতেন, পদার্থ অবিচ্ছিন্ন এবং এবং ভাঙনের কোনো সীমা নেই অর্থাৎ যতই ভাঙা হোক না কেন, পদার্থের কণাগুলো ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতর হতে থাকবে।

জন ডাল্টনের মতবাদ:

1803 সালে জন ডাল্টন (John Dalton) নামের ইংরেজ বিজ্ঞানী পরীক্ষালব্ধ তথ্যের উপর ভিত্তি করে পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা সম্পর্কে তাঁর মতবাদ দেন। তাঁর এই মতবাদ ডাল্টনের পরমাণুবাদ নামেই পরিচিত। ডাল্টনের মতে-

  1. মৌলিক পদার্থসমূহ পরমাণু নামক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দিয়ে গঠিত।
  2. একটি মৌলের বা মৌলিক পদার্থের সকল পরমাণু একই রকম।
  3. একটি মৌলের পরমাণুসমূহ অপর মৌলের পরমাণুসমূহ হতে ভিন্ন রকম।
  4. যৌগিক পদার্থসমূহ একের অধিক মৌলিক পদার্থ দিয়ে গঠিত।
  5. একটি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পরমাণুসমূহের সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না। শুধু একে অপরের সাথে যুক্ত হয় বা একে অন্য থেকে আলাদা হয়।

পরমাণু ও অণু

আমরা ডাল্টনের মতবাদ থেকে জানলাম যে, পদার্থ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দিয়ে গঠিত। এই ক্ষুদ্র কণাসমূহকে পরমাণু বলা হয়। তবে পরমাণু সাধারণত স্বাধীন বা মুক্ত অবস্থায় থাকতে পারে না। এটি অন্য পরমাণুর সাথে যুক্ত হয়ে অণু (Molecule) গঠন করে। অণুরা মুক্ত অবস্থায় থাকতে পারে। মৌলিক পদার্থের বেলায় শুধু ঐ পদার্থের পরামাণুরা যুক্ত হয়ে অণু গঠন করে। যেমন দুইটি অক্সিজেন পরমাণু যুক্ত হয়ে একটি অক্সিজেন অণু গঠন করে। অন্যভাবে বলা যায়, অক্সিজেন নামের মৌলিক পদার্থ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু দ্বারা গঠিত। আবার, অক্সিজেনের একটি অণুকে ভাঙলে অক্সিজেনের দুইটি পরমাণু পাওয়া যায়।

পরমাণু থেকে অণুর গঠন:

  • মৌলিক পদার্থের ক্ষেত্রে, একই প্রকারের দুটি বা ততোধিক পরমাণু একত্রিত হয়ে অণু গঠন করে
  • যেমন: দুটি অক্সিজেন পরমাণু যুক্ত হয়ে একটি অক্সিজেন অণু (O₂) তৈরি করে।
পরমাণু + পরমাণু → অণু

🔹 সংক্ষেপে:

  • অণু হলো একাধিক পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত স্থিতিশীল কণা।
  • একটি অক্সিজেন অণু (O₂) গঠিত হয় দুটি অক্সিজেন পরমাণুর সংযোগে।
  • অণুর গঠনের ফলে পরমাণুগুলো স্থিতিশীল থাকে এবং একা অবস্থায় থাকে না।
পানির অণু (H₂O)

এবার একটি যৌগিক পদার্থ যেমন পানির কথা বিবেচনা করি। একটি পাত্রে কয়েক ফোঁটা পানি নিয়ে একে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করতে থাকি। ধরা যাক, এক পর্যায়ে আমরা ছোট্ট এক ফোঁটা পানি পাব । সেই এক ফোঁটা পানিও অসংখ্য কণার সমষ্টি। এক পর্যায়ে হয়ত আমরা একটিমাত্র পানির কণা পাবো যে কণাতে পানির বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে। এই ক্ষুদ্র কণাটি হলো পানির অণু। পানির একটি অণু মুক্ত অবস্থায় থাকতে পারে ।

একটি পানির অণুকে ভাঙলে আরও ক্ষুদ্র কণা পাওয়া যায়, তবে সেগুলো স্বাধীনভাবে থাকতে পারে না। সেগুলো পানির বৈশিষ্ট্যও ধারণ করে না। আসলে তারা আর পানির কণা থাকে না। একটি পানির অণুকে ভাঙলে একটি অক্সিজেন পরমাণু ও দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু পাওয়া যায়। অন্যভাবে বলা যায় একটি অক্সিজেন পরমাণু ও দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু যুক্ত হয়ে একটি পানির অণু গঠন করেছে।

অক্সিজেন পরমাণু + হাইড্রোজেন পরমাণু + হাইড্রোজেন পরমাণু → পানি অণু (HO)

✅পরমাণু ও অণুর পার্থক্য ও সম্পর্ক

  • পরমাণু হলো ক্ষুদ্রতম কণা, যা পদার্থ গঠনের মূল উপাদান।
  • পরমাণু একা স্বাধীন অবস্থায় থাকতে পারে না।
  • দুই বা ততোধিক পরমাণু একত্রিত হয়ে অণু গঠন করে।
  • একই ধরনের পরমাণু মিলে মৌলিক পদার্থের অণু তৈরি হয়।
  • বিভিন্ন প্রকারের পরমাণু মিলে যৌগিক পদার্থের অণু তৈরি হয়।
  • অণু স্বাধীনভাবে থাকতে পারে এবং পদার্থের বৈশিষ্ট্য বজায় রাখে।

পরমাণু ও প্রতীক

আগের পাঠে তোমরা জেনেছ যে, ভিন্ন ভিন্ন মৌলের পরমাণু ভিন্ন ভিন্ন হয়। এখন প্রশ্ন হলো, সর্বমোট কতগুলি মৌল বা মৌলিক পদার্থ আছে অথবা কত রকমের পরমাণু আছে? এ পর্যন্ত ১১৮টি মৌলিক পদার্থ আবিষ্কৃত হয়েছে যার মধ্যে ৯৮টি প্রকৃতিতে পাওয়া যায় আর বাকি ২০টি কৃত্রিমভাবে তৈরি মৌলিক পদার্থ। প্রতিটি মৌলিক পদার্থেরই একটি নাম আছে। আর এদেরকে সংক্ষিপ্ত ও সুবিধাজনকভাবে প্রকাশের জন্যই আমরা প্রতিটির জন্য আলাদা প্রতীক ব্যবহার করি। প্রতীক সাধারণত মৌলের ল্যাটিন, গ্রিক বা ইংরেজি নামের একটি বা দুটি আদ্যক্ষর দ্বারা প্রকাশ করা হয়। একটি অক্ষর দিয়ে প্রকাশিত প্রতীকের ক্ষেত্রে সর্বদাই বড় হাতের অক্ষর আর দুটি অক্ষর দিয়ে প্রকাশিত প্রতীকের ক্ষেত্রে প্রথমটি বড়ো হাতের অক্ষর এবং পরেরটি ছোট হাতের অক্ষর হয়। নিচে কয়েকটি পরমাণুর প্রতীক ও তাদের ইংরেজি, গ্রিক বা ল্যাটিন নাম দেয়া হলো।

অণু ও সংকেত

আমরা শিখেছি যে, দুই বা ততোধিক পরমাণু একত্রে যুক্ত হয়ে অণু তৈরি করে। একটি অণুতে কী কী পরমাণু আছে সেটা জানা যায় সংকেত থেকে। আসলে অণুর সংক্ষিপ্ত প্রকাশই হলো সংকেত। একটি অণু যে যে মৌলের পরমাণু দিয়ে গঠিত সেসব মৌলের প্রতীক দিয়ে সংকেত লেখা হয়। আমরা এখন সংকেত লেখার নিয়ম ও সংকেত থেকে কী বোঝা যায় সে সম্পর্কে জানব ।

মৌলিক পদার্থের সংকেত:

কঠিন বা তরল মৌলিক পদার্থের ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায় অনেক পরমাণু একসাথে থাকে, কোনো অণু গঠন করে না। তাই এ ধরনের মৌলের ক্ষেত্রে অণুর সংকেত লেখা হয় না। যেমন, সোডিয়াম, লোহা, কপার ইত্যাদি। তবে গ্যাসীয় মৌলসমূহের ক্ষেত্রে সাধারণত দুটি পরমাণু যুক্ত হয়ে অণু গঠন করে। এজন্য তাদের সংকেত লেখা হয় প্রতীকের নিচে ডানপাশে ছোটো করে 2 লিখে। যেমন অক্সিজেনের সংকেত O2, নাইট্রোজেনের সংকেত N2। তবে কিছু কিছু তরল ও কঠিন মৌলের ক্ষেত্রেও দুটি পরমাণু যুক্ত হয়ে অণু গঠন করে। তাদেরও সংকেত লেখা হয় প্রতীকের নিচে ডানপাশে ছোটো করে 2 লিখে । যেমন ব্রোমিন (তরল) এর সংকেত Br2 । নিচে কিছু মৌলের সংকেত দেয়া হলো

যৌগিক পদার্থের সংকেত:

যৌগিক পদার্থের সংকেত থেকে বোঝা যায় যৌগটি কী কী মৌল বা পরমাণুগুচ্ছ দিয়ে এবং কী অনুপাতে তৈরি। যেমন পানির সংকেত H2O থেকে বোঝা যায় একটি পানির অণু দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু ও একটি অক্সিজেন পরমাণু থেকে তৈরি। নিচের ছক থেকে আমরা দেখব কীভাবে সংকেত থেকে বোঝা যায় যৌগটি কী কী দিয়ে তৈরি।

পরমাণুর কণা

পরমাণু আকারে খুবই ছোটো। এতই ছোটো যে, খালি চোখে এদের দেখা যায় না। এমনকি সাধারণ মাইক্রোস্কোপ যন্ত্রের সাহায্যেও না। তবে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে পরমাণু দেখা যেতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে কোনো জিনিসকে তার আকারের তুলনায় কয়েক মিলিয়ন গুণ বড় দেখা যায়। এখন প্রশ্ন হলো, এত ছোটো পরমাণুকে ভেঙে কি আরও ক্ষুদ্রতর কোনো কণা পাওয়া যায় ? ডাল্টনের পরমাণুবাদ অনুযায়ী, পরমাণু অবিভাজ্য অর্থাৎ একে আর ভাঙা যায় না। ডাল্টনের এই মতটি অনেকদিন পর্যন্ত সবাই সমর্থন করলেও এখন এটি প্রমাণিত সত্য যে, পরমাণুকে ভেঙে আরও ক্ষুদ্র কণায় পরিণত করা যায়। পরমাণু ভেঙে মূলত যে তিনটি কণা পাওয়া যায় তা হলো ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন। আধুনিক গবেষণায় এটি প্রমাণিত যে, পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউট্রন ও প্রোটন আর কেন্দ্রের চারদিকে বৃত্তাকার কক্ষপথে ইলেকট্রন ঘুরতে থাকে। একই ধরনের একটি পরমাণুতে সমানসংখ্যক ইলেকট্রন ও প্রোটন থাকে।

Last updated on